🌸বিনয় ঘোষ (ছদ্মনাম : 'কালপেঁচা')🌸 'পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি'র লেখক।

বাংলা ভাষা ও লোকসংস্কৃতির গবেষক, সমাজতাত্ত্বিক, সাংবাদিক, সাহিত্য সমালোচক হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন।

🌸জন্ম : ১৯১৭ সালে ১৪ ই জুন কলকাতার মনোহরপুকুরে জন্মগ্রহণ করেন। আদি নিবাস জেলার বনগাঁর গোয়াপাড়ায়।

 

🌸মৃত্যু : ৬৬ বৎসর বয়সে কলকাতায় ২৫ শে জুলাই ১৯৮০ সালে।

🌼পিতা-  বিশ্বেশ্বর ঘোষ।  🌼মাতা : সরসীবালা।

বিশ্বেশ্বর ঘোষ ছিলেন নির্ভীক ও স্পষ্টবাদী মানুষ। তাই সামান্য কেরানিগিরি থেকে শুরু করে কর্মকুশল ও সততার পথে উন্নীত হন উচ্চতর পদে। মা ছিলেন স্নেহময়ী যা ছেলেকেই ঘিরে থাকতো। পিতার শাসন ও মায়ের স্নেহে বড় হয়ে উঠেছেন বিনয় ঘোষ।

🌸শিক্ষাজীবন : বিনয়ের বিদ্যারম্ভ মনোহরপুকুরে নীরদ মাস্টারের পাঠশালায়। পরে ক্যাথিড্রাল স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং আশুতোষ কলেজ থেকে আইএ এবং বিএ পাশ করেন। তাঁর ছিল অর্থনীতিতে অনার্স। অনেকটা পরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি (নৃতত্ত্ব) বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান। তাঁকে নৃতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করতে উৎসাহ দেন প্রখ্যাত অধ্যাপক নীহাররঞ্জন রায়। বিনয় ঘোষ নিজেও চেয়েছিলেন নীহারবাবুর অধীনে গবেষণা করে পিএইচ ডি করতে। কিন্তু নানা কারণে তা হয়ে ওঠেনি।শেষ পর্যন্ত অ্যাকাডেমিয়ার রাজসিক জীবিকার বদলে চলে গেলেন সমাজ-সংস্কৃতি-নৃতত্ত্বের ব্রতে।

🌸কর্মজীবন : ছাত্রজীবন থেকেই তিনি মার্কসবাদী বিশ্বাসী ছিলেন। দীর্ঘকাল ধরে সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করেছেন।নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সাপ্তাহিক ফরোয়ার্ড (১৯৩৯-১৯৪১),  যুগান্তর (১৯৪৩-১৯৪৫), দৈনিক বসুমতী (১৯৪৬-১৯৪৭) ও সাপ্তাহিক অরণি পত্রিকায় সাংবাদিকতার বিভিন্ন পদে  দায়িত্ব পালন করেছেন।১৯৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যাসাগর বক্তৃতামালার প্রথম বক্তা ছিলেন। ১৯৫৮-১৯৬০ পর্যন্ত রকফেলার রিসার্চ স্কলার হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গবেষণা করেন। পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি(১৯৫৭) গ্রন্থের জন্য ১৯৫৯-এ রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। 

🌸ভারতীয় গণনাট্য সংঘ : 

বিনয় ঘোষ ভারতীয় ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সক্রিয় সদস্য কর্মী ছিলেন। তার রচিত 'ল্যাবরেটরি' নাটক এক সময়ে এই সঙ্ঘের দ্বারা অভিনীত হয়। তিনি এই সংঘের গানের দলের নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, পাহাড়প্রমাণ অন্যায়-দুর্নীতি, মৃত্যুস্রোত ইত্যাদির প্রেক্ষাপটে বিনয় ঘোষ ল্যাবরেটরী নাটকটি লেখেন। নাটকটি ফ্যাসিস্ট বিরোধী চলচ্চিত্র প্রফেসর 

ম্যামলকের আদর্শ অনুসরণের রচনা করেন।

ছোটগল্প সংকলন-

ডাস্টবিন : প্রথম জীবনে বিনয় ঘোষ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় অনেেক গল্প লিখেছিলেন। সমস্তত গল্পগুলিকে সংকলিত করে পৃথকভাবে গ্রন্থবন্ধ করার সময় তিনি পাননি।

১৯৪৩ এ 'বোধন' নামে তার একটি গল্প সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল। দীর্ঘকাল পরে গ্রন্থটির দ্বিতীয় সংস্করণ ডাস্টবিন (১৯৮০) নামে প্রকাশিত হয়। গল্পগুলি 1930 এর দশকের শেষ দিক থেকে ১৯৪০ এর প্রথমদিকে রচনা। গ্রন্থটি বিনয় ঘোষ 'প্রিয় ডাশহুড কুকুর ভিটে'র' উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত।

🔯বিনয় ঘোষের প্রবন্ধগ্রন্থ গুলি হল-

শিল্প সংস্কৃতি ও সমাজ(১৯৪০)

নতুন সাহিত্য সমালোচনা(১৯৪০

আন্তর্জাতিক রাজনীতি(১৯৪১) 

ফ্যাসিজম ও জনযুদ্ধ(১৯৪২)

সংস্কৃতির দুর্দিন(১৯৪৫)

বাংলার নবজাগৃতি(১৯৪৮)

বরণীয় বাঙালি(১৯৫০)

 কাল পেঁচার নকশা(১৯৫১)

কলকাতার কালচার(১৯৫৩)

জনসভার সাহিত্য(১৯৫৫)

কাল পেঁচার বৈঠকে(১৯৫৭)

পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি(১৯৫৭)

বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ(১ম ও২য় খন্ড১৯৫৭, ৩য় খন্ড১৯৫৯)

টাউন কলিকাতার কড়চা (১৯৬০)

বিদ্রোহী ডিরোজিও(১৯৬১)

 বাংলার বিদ্বৎসমাজ(১৯৭৩)

অটোমেটিক জীবন ও সমাজ(১৯৭৮)

মেহনত ও প্রতিভা(১৯৭৮)

নববাবু চরিত(১৯৭৯)

🔯বিনয় ঘোষের প্রবন্ধ গ্রন্থের শ্রেবিন্যাস-

ক) ফ্যাসিবিরোধী আন্দোলন পর্বের রাজনৈতিক আলোচনা-

আন্তর্জাতিক রাজনীতি(১৯৪১)

সোভিয়েত সভ্যতা 

ফ্যাসিজম ও জনযুদ্ধ(১৯৪২)

ভারত ও সোভিয়েত মধ্য এশিয়া

খ)সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সমাজ বিষয়ক বস্তুবাদী বিশ্লেষণ-

শিল্প সংস্কৃতি ও সমাজ(১৯৪০)

নতুন সাহিত্য সমালোচনা(১৯৪০)

মেহনত ও প্রতিভা(১৯৭৮)

গ)পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক ইতিহাস ও তার তাত্ত্বিক আলোচনা-

পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি(১৯৫৭)

বাংলার লোকসংস্কৃতির সমাজতত্ত্ব (১৯৭৯)

ট্রাডিশনাল আর্টস এন্ড ক্রাফট্স অব ওয়েস্ট বেঙ্গল

ঘ)কলকাতা শহরের ইতিহাস পর্যালোচনা -

কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত (দ্বিতীয় খন্ড)

ঙ)বাংলার উনিশ শতকের পটভূমিকায় জীবনী আলোচনা-

বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ(১ম ও২য় খন্ড১৯৫৭, ৩য় খন্ড১৯৫৯)

বিদ্রোহী ডিরোজিও(১৯৬১)

চ) আধুনিক বাঙালি জীবন ও সাংস্কৃতিক সমাজতাত্ত্বিক আলোচনা-

বিদ্রোহী ডিরোজিও(১৯৬১)

বাংলার সামাজিক ইতিহাসের ধারা

বাংলার বিদ্বৎসমাজ(১৯৭৩)

মেট্রোপলিটন মন মধ্যবিত্ত বিদ্রোহ (১৯৭৩)

ছ)আধুনিক বাঙালি জীবন ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক লঘু-গুরু রচনা-

নববাবু চরিত (১৯৭৯)

কাল পেঁচার নকশা(১৯৫১)

কালপেঁচার দু'কলম(১৯৫২)

কাল পেঁচার বৈঠকে(১৯৫৭)

জ)অন্যান্য প্রবন্ধ গ্রন্থ-

জনসভার সাহিত্য (১৮৫৫)

অটোমেটিক জীবন ও সমাজ(১৯৭৮)

যুব কল্যাণ

গরিব গণবিদ্রোহ ও ভগবান

🔯বিনয় ঘোষের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ সম্পর্কে-

✴️শিল্প সংস্কৃতি ও সমাজ (১৯৪০): এই গ্রন্থে লেখক নন্দনতত্ত্ব, সাহিত্য ও সমাজ সম্পর্কিত বিষয়ের ক্ষেত্রে মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গির যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা করেছেন। লেখক এর মতে শিল্পের খাতিরে শিল্প নয়, জীবনের ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা স্বীকার করেই শিল্প হয়ে ওঠে সত্য, শিব ও সুন্দর।এই গ্রন্থে মোট 12 টি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। প্রবন্ধ গুলির কয়েকটি হল: 'ডায়লেকটিক', 'শিল্পের স্বরূপ বিশ্লেষণ', 'সত্য ও বাস্তব', 'কাব্য', 'কাব্যের ক্রমবিকাশ', 'উপন্যাস', 'উপন্যাসের ঐতিহাসিক ধারা', 'আধুনিক সোভিয়েট সাহিত্য', এছাড়া ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের সংস্করণে 'কেন লিখি? কার জন্য লিখি?'শীর্ষক একটি রচনা এই গ্রন্থের শেষভাগে স্থান লাভ করেছে।

✴️নূতন সাহিত্য ও সমালোচনা(১৯৪০): লেখক মার্কসীয়় ভাবাদর্শের আলোকে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-সমাজ ও জীবন জগতের নানান প্রকরণগুলিকে বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন আজীবন। 'নূতন সাহিত্য ও সমালোচনা' গ্রন্থে সেই চিন্তা-ধারা প্রকাশিত হয়েছে ধারালো ভাবে। গ্রন্থে মোট আটটি প্রবন্ধ আছে। সেগুলি হল-নূতন সাহিত্য, চীনের সাম্প্রতিক সাহিত্য ও সাহিত্যিক, সাহিত্য ও প্রোগাগান্ডা, নূতন সমালোচনা, বাংলা সমালোচনা, সমরোত্তর ইংরেজি কাব্য, সাম্প্রতিক বাংলা কবিতা এবং ভারতীয়় সংস্কৃতির বেদী।

✴️মেহনত ও প্রতিভা: এই গ্রন্থেেের অধিকাংশ প্ররবন্ধ গুলি 'পরিচয়', 'শনিবারের চিঠি', 'চতুরঙ্গ,' 'তত্ত্বকৌমুদী', এবং কিছু ছোট ছোট পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থের সংকলিত প্রবন্ধ গুলি হল-মেহনত ও প্রতিভা, দীনবন্ধু মিত্র বাংলা রঙ্গমঞ্চ ও বাঙালি সমাজ, বাংলা গদ্যের আদি পর্ব, তারাশঙ্করের সাহিত্য ও সামাজিক প্রতিবেশ, গেট-টু-গ্যাদার। এছাড়া এই গ্রন্থে কয়েকটি গ্রন্থালোচনা সংকলিত হয়েছে। যেমন-অর্থনীতির ভোজবাজি, গৃহভৃত্যদের সামাজিক ভূমিকা, স্বদেশী আন্দোলন ও ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় এবং রামমোহনরায়ের জীবনচরিত।

✴️ পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি : পশ্চিমবঙ্গেের বিভিন্ন অঞ্চলের নানান লৌকিক পরব-পার্বণ আচার-অনুষ্ঠান প্রচার-সংস্কার দেবদেবী-দেবালয় শিল্পকলা জনগোষ্ঠী ইত্যাদি সংস্কৃতির বিষয়গুলি লেখক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছেন। লেখক প্রায়় দু'শটি প্রত্যক্ষ করে তার মধ্যে নব্বইটি গ্রামের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।

গ্রন্থের প্রথম খন্ডে বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ডে মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃতির পরিচয় দিয়েছেন। গ্রন্থের তৃতীয় খন্ডে মুর্শিদাবাদ, নদীয়া ও চব্বিশ পরগনা জেলার গ্রাম ভিত্তিক সাংস্কৃতিক পরিচয় স্থান পেয়েছে। গ্রন্থের চতুর্থ খন্ডের প্রকাশকাল- এপ্রিল, ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দ।প্রাবন্ধিক বিনয় ঘোষের মৃত্যুর পর তার সহধর্মিনী বীণা ঘোষ লেখক কর্তৃক বিন্যস্ত কতকগুলি অধ্যায় নিয়ে চতুর্থ খন্ড প্রকাশ করেন। স্বাভাবিক কারণেই এই খন্ডে বিনয় ঘোষের সম্পূর্ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।

✴️ বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ : গ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল তিনটি খন্ডে। প্রথম খন্ডে সংকলিত হয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বিনয় ঘোষ প্রদত্ত "বিদ্যাসাগর বক্তৃতামালা"র(১৯৫৬-১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দ )ছয়টি বক্তৃতা। দ্বিতীয় ও তৃতীয়় খন্ডে আলোচিত হয়েছিল বিদ্যাসাগরের জীবনী অংশ। 

✴️বিদ্রোহী ডিরোজিও : লেখক বিনয় ঘোষ ডিরোজিওর জীবন ও কর্মের আলোচনা করেছেন 'বিদ্রোহী ডিরোজিও' গ্রন্থে। গ্রন্থটি মার্চ, ১৯৬১তে প্রথম প্রকাশিত হয়। এর প্রায়় উনিশ বছর পর গ্রন্থটির গ্রন্থটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে। জানুয়ারি 2002 খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় সংস্করণে ডিরোজিওর উপর বিনয় ঘোষের মূল্যবান অক্সফোর্ড্ড ইউনিভার্সিটির প্রেস বক্তৃতাটি (২৫ শে এপ্রিল,১৯৮০) সংযোজিত হয়েছে। দশটি মূলপর্বে  এবং চারটি পরিশিষ্ট অংশে বিনয় ঘোষ ডিরোজিওর জীবন কর্মকে বিন্যস্ত করেছেন।

✴️বাংলার নবজাগৃতি: এই গ্রন্থে উনিশ শতকের নবজাগরণের রূপটি নিজস্ব চিন্তা-চেতনার দ্বারা তুলে ধরেছেন। গ্রন্থের প্রথম সংস্করণে বহু কথিত-চর্চিত-বিতর্কিত বাংলার নবজাগরণের উৎস ও প্রকৃতির উপর সমাজতাত্ত্বিক করেছেন লেখক। প্রথম সংস্করণের চারটি অধ্যায় উঠে এসেছে বাংলার প্রাচীন গ্রাম্য সমাজের বৈশিষ্ট্য, বিবর্তন, নতুুুুন অর্থনৈতিক জীবনের বিন্যাস, বাংলার হিন্দু- মুসলমান সংস্কৃতির সমন্বয়, যন্ত্রর যুগের আবির্ভাবের সঙ্গে নবজাগরণের ভাব বিপ্লবের প্রসঙ্গ।

১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার নবজাগরণের বিষয়টি পৃথকভাবে সমীক্ষা ও সমালোচনা করেছেন। এই সমীক্ষা সমালোচনা অংশটি সংযোজিত হয়েছে পরিবর্ধিত সংস্করণে।

✴️বাংলার বিদ্বৎসমাজ : উনিশ শতকের আধুনিক যুগের বাঙালি বুদ্ধিজীবীর বিকাশকাল থেকে বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে পর্যন্ত বাংলার বিদ্বৎ সমাজের নানান বিষয় সমাজতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে বিনয় ঘোষ আলোচনা করেছেন প্রবন্ধ গুলির মধ্যে। এই গ্রন্থের মূল প্রবন্ধধ গুলি হল- 'বাংলার বিদ্বৎ সমাজ' , 'বাঙালি বিদ্বৎ সমাজের সমস্যা', 'বাংলার বিদ্বৎ সভা ও বাঙালি বুদ্ধিজীবী', 'যন্ত্র গণতন্ত্র জনসমাজ ও বুদ্ধিজীবী', 'বাঙালি বুদ্ধিজীবীর ক্রমবিকাশ', এবং 'বিদ্যা বিদ্বান বিদ্যালয় এবং বিদ্যার্থী বিদ্রোহ'।

✴️কালপেঁচার নকশা :দৈনন্দিন 'সংলাপীয় ভঙ্গি' বহার করেছেন। লেখক 'কালপেঁচা' ছদ্মনামে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে 'কালপেঁচার দু'কলম'এবং ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে কাল পেঁচার বৈঠকে প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করেন। এই তিন গ্রন্থ একত্রে 'পাঠভবন' থেকে 'কালপেঁচার রচনাসংগ্রহ' প্রকাশিত হয়।

✴️আন্তর্জাতিক রাজনীতি (১৯৪১): দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় লেখা। গ্রন্থটি ফ্যাসিজম বিরোধী রচনার সংকলন। গ্রন্থটির প্রবন্ধ সংখ্যা সাতটি।

✴️টাউন কলিকাতার কড়চা (১৯৬০): গ্রন্থটিতে ন'টি প্রবন্ধ আছে। সেগুলি হল- 'স্ট্যাভার্ণ ও কফি হাউস', 'সাহেব নবাবদের টাউন', 'নতুন বাঙালি বড়লোক', 'পালকি ও ল্যান্ডের যুক', 'ক্রীতদাস ও কুলিমজুর', 'নতুন শহরে পুরাতন ভৃত্য', 'ডুয়েল', 'সেদিনের ইংরাজ বিচার', 'মধ্যবিত্তের বৈচিত্র'। গ্রন্থটিতে লেখক সমকালীন কলকাতার নাগরিক জীবনের অনেক চিত্র তুলে ধরেছেন।

✴️ সুতানুটি সমাচার(১৯৬১): গ্রন্থটির চারটি অধ্যায়। অধ্যায়গুলি হল-'উইলিয়াম হিকির স্মৃতিকথা:১৭৭৭-১৮০৮', 'এলিজা ফে'র চিঠিপত্র','ফ্যানি পার্কস্-এর ভ্রমণ বৃত্তান্ত', এবং 'ভিকতর জ্যাকমোর চিঠি'। গ্রন্থটি শ্রী পরিমল গোস্বামীকে উৎসর্গীকৃত।

🔯প্রশ্নোত্তর : 

১. বিনয় ঘোষের প্রথম প্রকাশিত প্রবন্ধ গ্রন্থের নাম কী?

উঃ শিল্প সংস্কৃতি ও সমাজ।

২. বিনয় ঘোষের কোন গ্রন্থে ছয়জন কৃতি পুরুষের জীবন কথা আছে?

উঃ বাংলার নবজাগৃতি গ্রন্থে।

৩. কলকাতা কালচারে'র প্রকাশকাল কত?

উঃ ১৯৫৩

৪. বিনয় ঘোষ তার পিতাকে কোন গ্রন্থটি উৎসর্গ করেন?

উঃ বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ।

৫. বিনয় ঘোষের কোন গ্রন্থটিকে রাজ শেখর বসু উচ্চ প্রশংসা করেছেন?

উঃ কাল পেঁচার বৈঠকে।

৬.বিনয় ঘোষের ডাস্টবিন গল্পগ্রন্থে কতগুলি গল্প আছে?

উঃ ১২ টি।

৭. বিনয় ঘোষ তার কোন গ্রন্থে সাহিত্য, সাহিত্যিক ,প্রকাশক, পাঠক, মুদ্রণ শিল্প নিয়ে আলোচনা করেছেন?

উঃ জনসভার সাহিত্য গ্রন্থে।

৮. বিনয় ঘোষের ইউনেস্কো পুরস্কার প্রাপ্ত গ্রন্থের নাম লিখুন?

উঃ যুবকল্যাণ।

৯. আন্তর্জাতিক রাজনীতি গ্রন্থের প্রবন্ধ সংখ্যা কত?

উঃ সাতটি।

১০. বিনয় ঘোষের প্রবন্ধ সংগ্রহ এর নাম লিখুন?

উঃ 'অটোমেটিক জীবন ও সমাজ এবং মেহনত প্রতিভা'।

১১. বিনয় ঘোষের ডাস্টবিন গল্প সংকলন এর প্রকাশকাল কত?

উঃ ১৯৮০

১২. বিনয় ঘোষ কোন গ্রন্থটি তার মাতাকে উৎসর্গ করেন?

উঃ পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি।

১৩. বিনয় ঘোষের শিল্প সংস্কৃতি ও সমাজ গ্রন্থে কতগুলি প্রবন্ধ আছে?

উঃ ১২টি।

১৪. 'কাব্যের ক্রমবিকাশ'প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থের অন্তর্গত?

উঃ শিল্প সংস্কৃতি ও সমাজ গ্রন্থের অন্তর্গত।

১৫. বিনয় ঘোষের নূতন সাহিত্য সমালোচনা গ্রন্থে কতগুলি প্রবন্ধ আছে?

উঃ আটটি।

১৬. বাংলা গদ্যের আদি পর্ব প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থের অন্তর্গত?

উঃ মেহনত ও প্রতিভা।

১৭. 'বাঙালি বুদ্ধিজীবীর ক্রমবিকাশ'প্রবন্ধ টি কোন গ্রন্থের অন্তর্গত?

উঃ বাংলার বিদ্বৎ সমাজ।

১৮. সুতানুটি সমাচার গ্রন্থের অধ্যায় কত?

উঃ চারটি।

১৯. 'ক্রীতদাস কুলি মজুর'প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থের অন্তর্গত?

উঃ টাউন কলিকাতার কড়চা।

২০. 'সুতানুটি সমাচার' গ্রন্থটি কাকে উৎসর্গ করেন?

উঃ পরিমল গোস্বামী কে।